নিবন্ধ: সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা এবং উগ্র আর.এস.এস-এর বিদ্বেষপূর্ণ প্রচারণা রাকিবুল ইসলাম সারা ভারত তোলপাড় আট বছরের আসিফার ...
নিবন্ধ:
সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা এবং উগ্র আর.এস.এস-এর বিদ্বেষপূর্ণ প্রচারণা
রাকিবুল ইসলাম
সারা ভারত তোলপাড় আট বছরের আসিফার উপর নিষ্ঠুর নির্যাতন এবং পাশবিক অত্যাচার নিয়ে। একেবারে সাধারণ শ্রমজীবী মানুষ, সমাজকর্মী, সাহিত্যিক, সরকারী চাকুরীজীবী, চলচ্চিত্র অভিনেতা শুরু করে সকল শ্রেণির মানুষকে রাস্তায় নামিয়েছে আসিফার উপর পাশবিক নির্যাতন। এই ঘটনায় শুধু দেশে নয়, বিদেশেও সমানভাবে আলোড়ণ ফেলেছে। সবচেয়ে লজ্জার বিষয় হল ধর্ষকের সমর্থনে বিজেপি বিধায়কদের আদলতচত্তরে মিছিল সকলকে অবাক করেছে। এটা একটা সভ্য সমাজের দুর্ভাগ্য যে কোন দেশের জনপ্রতিনিধিদের জাতীয় পতাকা নিয়ে ধর্ষকের সমর্থনে মিছিল বার করা। বিশ্ব একটা নজীরবিহীন ঘটনার সাক্ষী হয়ে থাকল। এত কিছুর পরও ভারতের শাসন ক্ষমতায় অধিন বিজেপি নেতামন্ত্রীদের মুখ থেকে যেসব কথা বেরিয়েছে তা একজন প্রশাসনের উচ্চপদে আসীন সংবিধানের রক্ষকের মুখে সেসব কথা মানায় না। একজন তো বললেন, 'এত বড়ো দেশে দু-একটা' ধর্ষণের ঘটনা নাকি ঘটবে! কেউ বলছেন এটা নিয়ে বড্ড বাড়াবাড়ি হচ্ছে 'যখন হিন্দু ধর্ষিতা হয় তখন এদের পথে নামতে দেখা যায়না'। প্রায় সাত-আট দিন ধরে একটা আট বছরের একটা শিশুকে নেশার বড়ি খাইয়ে আটজন পাশণ্ড যেভাবে ধর্ষণ এবং শেষে মাথায় পাথর দিয়ে থেতলে হত্যা করল এমন ঘটনাকে এভাবে জাতে তোলাকে চরম র্নিলজ্জতার পরিচয়ক। বিজেপির আইটি সেল এই ঘটনা নিয়ে বারবার বিকৃত তথ্য প্রকাশ করেছে যাতে বিষয়টা যেন মানুষ হালকা ভাবে দেখে। এতেও তারা থেমে থাকেনি বিভিন্ন পুরোনো ঘটনা তুলে এনে বলতে থাকে 'মুসলিমদের বেলায় পথে নামা আর হিন্দুদের বেলায় চুপ থাকা!' এরপর যখন কোন কাজ হচ্ছে না দেখে তারা দেশ বিদেশের ভিত্তিহীন লিঙ্ক দিয়ে মানুষের মধ্যে বিদ্বেষ ছড়াতে থাকে এবং এখনও তা একই গতিতে চলছে। শুধুমাত্র বিষবাষ্প ছড়ানোর জন্যে তারা হাজার হাজার নিউজ পোর্টাল খুলেছে। সোসাল মিডিয়ায় সমানভাবে ফেক আইডি খুলে বিভন্ন ভুল তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। তারা এতটা সক্রিয় যে যদি কেউ সঠিক তথ্য দিয়ে যুক্তিপূর্ণ বিতর্ক করলে তার আইডিতে রিপোর্ট করে ব্লক করে দিচ্ছ।
দেশের স্বাধীনতার বিরোধী বলে আর.এস.এস.-এর ভারতের ইতিহাসে কুখ্যাতি আছে। তারা সংবিধানেরও শত্রু। সুযোগ পেলে সংবিধানের 'সার্বভৌম গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ' শব্দগুলোর পরিবর্তন করবে এটা তাদের বিভিন্ন প্রকাশ্য আলোচনায় তা গর্বভরে তুলে ধরে। তারই প্রস্তুতি সরূপ এদেশ দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় গোষ্ঠী মুসলিমদের বিরুদ্ধে মানুষের কাছে ভুল তথ্য পরিবেশন করে তথ্য শূণ্যতা তৈরী একে অপরের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তুলছে। তার পাশাপাশি গোটা দেশের মুসলিমদের মধ্যে একটা আতঙ্ক ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে, অন্যদিকে মুসলিমদের দাঙ্গার মত ভয়ঙ্কর বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এই কাজটি ত্বরান্বিত করার জন্যে নিজেরাই গরুর মাথা বা হাড় মন্দিরে ফেলে মুসলিমদের উপর দায় চাপনোর চেষ্টা করছে। আরও তারা সেই কাজটি করার জন্যে কখনো গরুর নামে মুসলিম হত্যা করে দ্রুত সোসাল মিডিয়ায় তার বিরুদ্ধে ভুল তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। আবার ভিন্নধর্মে প্রেম-বিবাহের বিরুদ্ধে এমন সব গল্প তৈরী করছে তাতে কিছু মানুষের কাছে মুসলিমদের বিরুদ্ধে সহানুভূতির পরিবর্তে যাতে ঘৃণা তৈরী হয় সেই চেষ্টা করছে।
এই মূহূর্তে দিল্লির কাছে গাজয়াবাদের গীতা নামে এগারো বছরের মেয়ের ধর্ষণের ঘটনা মিডিয়ায় প্রকাশ পেয়েছে। প্রাথমিক ভাবে পুলিশ মনে করছে এটা ধর্ষণের ঘটনা। মেয়েটি যেহেতু নাবালিকা তাই পসকো আইন অনুযায়ী এটা সহবাস হলেও ধর্ষণ বলে গন্য হবে। প্রথেমে ঘটনাটা এমন ভাবে মানুষের কাছে বিজেপির আইটি সেল তুলে ধরছিল বিষয়টা শুনে মনে হবে এটা আসিফার বদলা নিচ্ছে মুসলিম সম্প্রদায়, যেটা ভাবলে যেন ঘৃণায় গা গুলিয়ে যাবে! পরবর্তীতে ক্যামেরায় মেয়েটিকে স্বেচ্ছায় মাদ্রাসায় যাওয়ার ভিডিও ধরা পড়ায় বিষয়টি নিয়ে খুববেশি বিদ্বেষ ছড়াতে সক্ষম হয়নি। তবে এটা দুঃখজনক যে অন্যায়কে অন্যায় হিসাবে না দেখে জাত বিচার করা হচ্ছে। নাবালিকা গীতাও আমার মেয়ে ওর সঙ্গেও যদি পাশবিক আচরণ করা হয় তবে তাদের দ্রুত বিচার করে প্রকাশ্যে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কার্যকর করার দাবী জানাই।
এই জটিল এবং কঠিন পরিস্থিতিতে সকল ধর্মনিরপেক্ষ মানবতাবাদীদের ঐক্যবদ্ধভাবে পথে নামতে হবে। এই সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প যদি এখুনি রোধ করা না যায় তবে এ দেশ এক ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে যাবে। যেভাবে মানুষকে ভাগ করার নীতি মানুষের মগজে ঢোকানো হচ্ছে তাতে গোটা দেশ ব্যাপি একটা দাঙ্গা লাগাতে পারলে ২০১৯ শে ক্ষমতা পাকা হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে ভোট ভাগাভাগির অঙ্কে এগিয়ে থাকবে বিজেপি নামক দলটি। দেশের এই সংকটময় মুহূর্তে সংখ্যাগুরু বুদ্ধিজীবীদের অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে। তা না হলে এই দেশকে জাতি বিদ্বেষ এবং ক্রমবর্ধমান হিংসার হাত থেকে বাঁচানো যাবে না।
COMMENTS