ছোটোগল্প: স্মার্টফোন আ বু জু না ই দ ■ ১ ■ সকালের নাস্তা দিতে দিতে সালমা তার স্বামীকে বলে, 'যদি তুমি কিছু ম...
স্মার্টফোন
আ বু জু না ই দ
■ ১ ■
সকালের নাস্তা দিতে দিতে সালমা তার স্বামীকে বলে, 'যদি তুমি কিছু মনে না কর তবে একটা কথা বলতাম?'
নাফিস কয়েক বছর ধরে দেখছে তো, নাফিজ জানে সালমার কিছু নেওয়ার দরকার হলে ও এমন করেই কথা তোলে, তাই সে একটু রসিকতা করে বলে, 'আজ আবার তোমার কি হল, কোন দিন কিছু বলতে গেলে পারমিশন নাও না, আজ...!'
-'থাক তাহলে বলব না'
- আরে রাগ করলে নাকি? আমি তো মজা করছিলাম। বল কি বলবে বলছিলে?
-অর্ক, সৌভিক ওদের মায়েরা নেটে দেখাচ্ছিল কিভাবে বাচ্চাদের যত্ন নিতে হয় তার বিভিন্ন টিপস ইউটিউবে দেওয়া আছে তাই দেখে ওরাও....
-ওদের বাচ্চাদের কেয়ার নেয়, এই তো!
সালমার মুখের কথা শেষ না হতেই নাফিস কথাগুলো বলে।
-হ্যাঁ, তাই আমার যদি একটা স্মার্টফোন কিনে দাও ভালো হয়, অবসর সময়ে একটু টিপস নিয়ে বাবুকে তৈরী করতে পারি।
-তা মন্দ বলনি, তবে আমি ভাবছিলাম একটা ল্যাপটপ নেব, মাঝে মাঝে অফিস থেকে তাড়াতাড়ি ফিরে অফিসের কিছু কাজ ঘরে বসে করতে পারব।
-'না না, তোমার বাড়িটাকে আর অফিস বানাতে হবে না, অফিসের কাজ তুমি অফিসেই কর, থাক আমার ফোন লাগবে না। তুমি তো সোনার স্কুলে যাও না তা দেখবে কি, কোন মায়ের হাতেই আর আমার মত আদ্দিকালের সেট নেই, ওদের সামনেই এটা বার করতে আমার কেমন লজ্জা লাগে, ওরা সবাই জানে তুমি একটা বড় কম্পানির এম. ডি., তোমার স্ত্রী হিসাবে ঐ মোবাইলটা বার করতে কেমন লাগে' কথাগুলো একটু অভিমানের সুরে বলে সালমা।
-তা ঠিক, এখন মোবাইলে মায়েরা অনেক কাজ করে তাই মাঝে শুনি বাচ্ছাকে না খাই স্কুলে নিয়ে যায়, বাচ্চার টিফিন দিতে ভুলে যায়, তোমার আবার এমন হবে না তো!
-থাক, তোমার আর মোবাইল কিনে দিতে হবে না!
-আরে, এ কি তুমি তো দেখছি সিরিয়াস হয়ে গেলে, কতবার তোমাকে আমারটা নিতে বললাম, তুমি তো এটা নিয়ে চালাতে পারতে!
-না থাক, মানুষের কোন সখ থাকতে নেই! তোমার কাছে কোন দিন কোন্ সখ করে পূরণ হয়েছে বলতে পার?
-এই তো সেই একই রেকডিং চালিয়ে দিলে। থাক কথা বাড়িয়ে কাজ নেই, তুমি সোনাকে একটু পড়াও আমি গোসলটা সেরে নিই।
নাফিস গোসল করে নয়টায় বেরিয়ে যায়, সালমা বাড়ির সামনে দশটা পনেরোয় গাড়ি আসে গাড়িতে করে ছেলেকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে আসে। বাড়ি থেকে দু কিলোমিটার দূরে আফিফের স্কুল। ও এখন ব্রাইট মুন চাইল্ড একাডেমিতে ক্লাস ওয়ানে পড়ে। সালমার সারাদিনের কাজ হল রান্না করা আর ছেলেকে খেয়াল রাখা। বাকি সময় কখনো বই- খবরের কাগজ বা টিভি দেখে কেটে যায়। আবার পৌনে দুটোর দিকে গাড়ি আসলে ছেলেকে নিতে স্কুলে যায়।
■ ২ ■
নাফিস প্রতিদিনের মত আজও সন্ধায় ফিরে ঘরে ঢুকে জামাকাপড় ছেড়ে ফ্রেস হয়ে বসে, প্রতিদিনের মত সালমা চায়ের কাপটা এগিয়ে দিলে নাফিস সালমার হাতটা ধরে নিজের দিকে টেনে নিতে যায়,
-কি করছ ছেলে দেখতে পাবে যে, আজ কি হল তোমার?
-দেখ, আমিও বুঝি আজ আর টিভির বিনোদনে কিন্তু মানুষ আর খুব বেশি ইন্টারেস্ট পাচ্ছে না, স্মার্টফোন এখন বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম তাই সকলেই এটা ব্যবহার করছে, তবে কি জানোহ এর ইউজের থেকে মিজইউজই বেশী হচ্ছে।
-ছাড়ো ওসব।
নাফিস ব্যাগ থেকে একটা বাক্স বার করে সালমার দিকে এগিয়ে দেয়।
বাক্সটা হাতে নিয়ে সালমা বুঝতে পারে তার জন্যে স্মার্টফোন নিয়ে এসেছে নাফিস।
-কই তখন তো কিছু বলে গেলে না, আবার এখন দেখছি এটা নিয়ে হাজির, কি ব্যপার বল তো!
-তোমার কোন ইচ্ছাই তো পূরণ করতে পারিনি, তাই.....
-ভালো হবে না কিন্তু, তুমি তো জানই আমার রাগ হলে মাথার ঠিক থাকে না।
-ছাড় ওসব মোবাইলে সিম খাটিয়ে দেখ সব ঠিকঠাক চলছে কিনা, তোমার আপাকে বললাম আসিফকে পাঠাতে ও এসে নেট-ফেট সেট করে বুঝিয়ে দিয়ে যাবে।
-তুমি আসিফকে কখন ফোন করে ছিলে?
-অফিস যাওয়ার পথে, কোন সেট ভালো হবে তোমার বোনপো বেশ ভালোই বোঝে, তাই ওর পরামর্শ মত এই সেট নিলাম।
-ও, এত ব্যস্ত না হলেও হত। এই নাও আমার মোবাইলের সিম লাগিয়ে দেখ।
সিম লাগিয়ে ফোন অন করে নাফিস বলে, -অনেক সফ্টওয়্যার লাগবে আমার এসব আবার মাথায় ঢোকে না। কথাগুলো বলতে বলতে মোবাইলটা সালমার কছে এগিয়ে দেয়।
মনে মনে কেমন যেন আনন্দ অনুভব করে সালমা। অনেক দিনের সখ ছিল একটা স্মার্টফোনের। যখনই যা বলে নাফিস মোটামুটি দেওয়ার চেষ্টা করে। তবুও অভিযোগ না করলে নয়, তাই সে অভিমান করে অভিযোগ করে। মনে মনে ভাবে আসিফ আসলে ওর কাছ থেকে ও ইন্টারনেটের খুঁটিনাটি বিষয় জেনে নেবে। যাইহোক নেট চালু হলে তো গোটা পৃথিবী হাতের মুঠোয়। এইসব নানান কথা ভাবছিল। আর নাফিস টিভিটা অন করে সংবাদ দেখছিল। ও দিকে আফিফ গেম খেলছিল নাফিজের কাছ থেকে মোবাইলটা নিয়ে।
■ ৩ ■
-নাফিস আহমেন নামে কোন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলেছ সালমা?
অফিস থেকে বাড়ি এসে নাফিস সালমাকে জিজ্ঞাসা করল।
-হ্যাঁ, আসিফ তো খুলে দিল। কে বলল তোমাকে?
-আমাদের অনুপদা, আমি ঠিকই আন্দাজ করেছিলাম। তবে তুমি তো জানই আমার এতে একদম ইন্টারেস্ট নেই। একটু সাবধানে ব্যাবহার করো, সোসাল মিডিয়া তো, কিসে কি হয়!
-ঠিক আছে।
-আর হ্যাঁ, আমাদের পারিবারিক ছবি-টবি যেন আপলোড করো না যেন।
-অবশ্যই মনে থাকবে জনাব, যাই তোমার চা টা নিয়ে আসি।
-আজ খুব খিদে পেয়েছে চায়ের সঙ্গে টা টা একটু ভারি দিও।
বলে চেয়ারে গা টা এলিয়ে দেয়।
