বিশেষ প্রতিবেদন: শাসন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর, জলকর এলাকা, হালকা জনবসতিপূর্ণ এলাকা শাসন, চোলপুর, মাগরি, তেহাটা, আমিনপুর প্রভৃতি ...
বিশেষ প্রতিবেদন: শাসন
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর, জলকর এলাকা, হালকা জনবসতিপূর্ণ এলাকা শাসন, চোলপুর, মাগরি, তেহাটা, আমিনপুর প্রভৃতি গ্রাম। এখন কেমন আছে সেই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে এখানে। লিখেছেন রাকিবুল ইসলাম।
এক সময় প্রতিদিন দৈনিক পত্রিকাগুলোর কভার স্টোরী তৈরী হত উত্তর ২৪ পরগনার শাসন থানার অন্তর্গত শাসন, চোলপুর, সর্দার আটি, মাগরি, তেহাটা প্রভৃতি গ্রামের ঘটনা নিয়ে। বলা হত শাসনের মুকুটহীন একছত্র রাজা মাজিদ মাস্টার। এককালের 'লালগড়' নামে বামপন্থীদের শক্ত ঘাটি এই বিস্তৃর্ণ জলকর এলাকা ছিল। চারিদিকে জল আর জল। গ্রামের একপাশ দিয়ে বয়েগেছে বিদ্যাধরী নদী। নদীর জলে ঘেরীগুলোতে বিভিন্ন জাতের মাছের চাষ হয়। যেমন এখানে সম্মৃদ্ধশালী লোক আছে তেমন আছে অত্যন্ত দরিদ্র ব্যক্তি। সামগ্রিকভাবে মোটামুটি ভালো ভাবে মানুষের জীবন চলে যাচ্ছে।
প্রাকৃতিক পরিবেশ:
চারিদিকে জলকর, যতদূর চোখ যাবে শুধু মাছ চাষের ঘেরী। জন বসতি হালকা। জলাভূমির জন্যে সবসময় একটু আদ্রতা বেশী। তবে সন্ধ্যায় ফুরফুরে হাওয়ায় প্রাণটা জুড়িয়ে যায়। বেশ কিছুদিন ছুটি কাটানোর জন্যে উপযুক্ত। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থা কোথাও কোথাও এখনো একটু সমস্যা আছে।
সাধারণের জীবন-যাত্রা:
আপত দৃষ্টিতে ধার্মিক। কেতাবি জ্ঞান কম। বিশেষত ফুরফুরা এবং বসিহাটের হুজুরদের প্রভাব খুব বেশী। এখানে শীতকালে ধর্মসভা (স্থানীয় ভাষায় 'জল্সা') লেগেই থাকে। কিন্তু পাঁচওয়াক্ত নামাজে খুববেশী লোককে দেখা যায় না।
এখানে কয়েকটি খারেজী মাদ্রাসা আছে। সেখানেও কিছু ছাত্র পড়ে। কুরআন শিক্ষার জন্যে কয়েকটি মক্তব চালু আছে।তবে মসজিদের সংখ্যা তুলনামূলক কম।
প্রাইমারী স্কুলগুলোর হাল ততটা ভালো বলে মনে হল না। খুব বেশী দিন হয়নি রং হয়েছে, তবুও দেখলে মনে হবে বছর দশেক রং হয়নি। আগের থেকে এখন কিছুটা শিক্ষার প্রতি আগ্রহ জন্মেছে, তবে এখনো যথেষ্ট কম। তেহাটায় কিছু সব্জি চাষের জমি আছে। সেখানকার লোকেদের পেশা মূলত কৃষিকাজ। তবে এই গ্রামের এখনো কিছু মানুষ এখনো ভাড়াটে লেঠেল হিসাবে কাজ করে। তাদের বিভিন্ন রেটও আছে। যারা সামনের দিকে থাকবে তাদের রেটটা অনেক বেশী।
বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি:
বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে কথা বলে একটা বিষয় পরিষ্কার হয়েছে যে রাজনৈতিক পালা বদলের সময় কিছুটা উত্তেজনা তৈরী হয়। এর মূল কারণ খাস জমি। জলকর এলাকায় বেশ কিছু খাস জমি আছে, এগুলোর দখল কাদের হতে থাকবে তা দলবাজি এবং গোষ্ঠী দন্দ্ব। যে দল ক্ষমতায় থাকে তাদেরই একচেটিয়া ক্ষমতা। অন্য কোন দলের পোষ্টার-ব্যানার চোখে পড়বেনা। সাধারণের মধ্যে রাজনীতি নিয়ে খুব বেশী উৎসাহ দেখা যায়না। গুটিকতক দেওয়াল লিখন নজরে পড়ল, নুসরত জাহানের। পাড়ায় ঢুকে মিটিং করে নেতারা জানিয়ে গেছে ভোট কাকে দিতে হবে। বেশির ভাগ লোক নিজের কাজ নিয়েই ব্যস্ত। যুবকদের বড় অংশ ভেড়ির কাজ এবং দর্জী কাজের সঙ্গে যুক্ত।
উল্লেখ্য মজিদ মাস্টার এখনও গ্রামের বাড়িতে ঢুকতে পারেনি। ওনার ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম বাড়িতে ওনার মেয়েকে রেখেছেন, উনি বারাসাতের কাজি পাড়ায় থাকেন। ওনার এক সময়কার ঘনিষ্ঠ ব্যাক্তির কাছে শুনলাম, মজিদ মাস্টার কোন দিনই চাননি তার বিকল্প কেউ তৈরী হোক। তাই যে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে তাকে চরম খেসারতও দিতে হয়েছে। আরও যেটা শুনলাম মজিদ মাস্টার প্রথম দিকে মুসলিম লীগ করত, পরে তিনি 'ভেড়ি-ভাড়ার' সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে বামপন্থী আন্দোলনে যোগ দেন।
COMMENTS