যুব চেতনায় ঘুণ

ফেসবুক পোস্ট: ইমাম আলী মোল‍্যা কয়েকদিনের বিরক্তি শেষ করে কিছু কথা বলে যাই, হাজার হাজার নিউজ, টুইটার হ্যান্ডেল, ফেসবুক পোস্ট ও নি...

ফেসবুক পোস্ট:

ইমাম আলী মোল‍্যা

কয়েকদিনের বিরক্তি শেষ করে কিছু কথা বলে যাই, হাজার হাজার নিউজ, টুইটার হ্যান্ডেল, ফেসবুক পোস্ট ও নিউজ পোর্টালগুলোর কমেন্ট দেখে দেশের চলমান সময়ে আমরা যা পেলামঃ-

●দেশের একদল মানুষ পেলাম যারা কাশ্মীরের মেয়েদের নিয়ে চরম ফ্যান্টাসিতে ভুগছে।

●বিশ্বের অন্যান্য উন্নত দেশগুলোতে যখন তরুণ সমাজ যখন তাদের মৌলিক অধিকার নিয়ে সচেতন, তখন এই দেশে যুবসমাজের বিরাট একটা অংশ পেলাম যাদের মৌলিক সুযোগ সুবিধা, চাকরি, শিক্ষা দরকার নেই। তারা কিছু স্লোগান, সস্তা খিস্তি আর বিদ্বেষেই খুশি।

●একটা প্রদেশের বাচ্চা থেকে বৃদ্ধ সবাইকেই জঙ্গি এবং পাথরবাজ বলে ঘোষণা দেয়া হলো এবং তারা "রাষ্ট্র ভারতের খেয়ে নেমকহারামি করেছে"!

অথচ দিনরাত ভারী বুটের আওয়াজে তাদের ঘুম হারামের কথা অস্বীকার করবো, ইচ্ছা ও সন্দেহ হলেই যে কাউকে পাখির মতো গুলি করে মেরে সন্ত্রাসী ঘোষণা দেওয়া নিয়ে আমি স্যাটিসফায়েড।

পুলওয়ামা কান্ডে পাকিদের গুষ্টি উদ্ধার করবো, কিন্তু একবারও জিজ্ঞেস করবো না কয়েকশো কেজি বিস্ফোরক এলো কিভাবে? যে জায়গার মানুষকে নিজের এলাকায় ঘুরতে গেলে তিন চার জায়গায় চেকপোস্টে আইডি কার্ড দেখতে হয়, সেরকম টাইট সিকিউরিটির জায়গায় কিভাবে এত বড়ো বিস্ফোরণ হলো আমি মোটেও জিজ্ঞেস করবো না। বরং নিউজ পোর্টালগুলোর কমেন্টবক্স ভর্তি করে পাকিস্তানের ও মুসলিমদের গুষ্টি উদ্ধার করবো।

● কাশ্মীরের ভারতে সংযুক্তির ইতিহাস জানার দরকার নেই, জানলেও দখলদারির নেশায় অন্ধ হয়ে থাকবো।

●মিম পেজগুলো থেকে সস্তা আবেগী পোস্ট করে হাজার হাজার লাইক কমেন্ট গুনে ঘুমাতে যাবো।

●রাষ্ট্র ভারতের বিবৃতিতে কাশ্মীরিরা খুব খুশি, অথচ তাদের খুশি আমরা মিডিয়াকে প্রকাশ করতে দেব না। আমরা ঘোষণা দিয়েছি এটাই যথেষ্ট, তাদের আবার মতামত কিসের? তারা ত জঙ্গি।

● বিশাল বিশেষজ্ঞ হয়ে বসবো, যেমনটা নোটবন্দির সুফল রচনা করেছিলাম সেরকম বাতেলা মারবো চায়ের আড্ডায়, ট্রেনে, বাসে।

●নোটবন্দির প্রধান এজেন্ডাই ছিল "সন্ত্রাসদমন আর ক্যাশলেস ইকোনমি", সেগুলো কতটা হয়েছে একবারও জিজ্ঞেস করবো না, বরং কেউ এসব প্রশ্ন করলে নিজে মালিক সেজে তাদেরকে দেশদ্রোহী ঘোষণা করবো, আমার হ্যাঁ-তে হ্যাঁ মেলালে তবেই তার হাতে দেশপ্রেমের সার্টিফিকেট তুলে দেবো, নাহলে তাদের সাথে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকের মতো আচরণ করবো এবং আমি জানি আমার সাপোর্টার অনেক, তাই আমিই জিতবো।

●আমি জানি কিভাবে প্রতিটি ঘটনায় হিন্দু-মুসলিমের রং দিতে হয়, তাই বাংলাদেশিদের, পাকিদের গালি দিয়ে,তুচ্ছ করে কিছু নোটস লিখে রাখবো, যেমন- "একাত্তরে তোদের স্বাধীনতা ভিক্ষা দিয়েছি, পাকিস্তানের সবাই সন্ত্রাসবাদী" ইত্যাদি। এগুলো ঘুরিয়ে ফিরিয়ে হালকা এডিট করে প্রতিটি নিউজ পোর্টালের কমেন্টবক্স ভর্তি করে দেব।

● আমিই তো এই দেশের মালিক,তাই এদেশে আমিই ঠিক করবো কে থাকবে আর কে বেরিয়ে যাবে।

তাই জায়গায় জায়গায় কমেন্টবক্সে বলবো, "পাকি, বাংলাদেশিরা ভর্তি এখানে" তাদের এই দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া উচিত।

● আমি অত্যন্ত ধুরন্ধর ও ধড়িবাজ, তাই প্রতিবেশীর অশিক্ষা ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে জড়তার সুযোগ নিয়ে মালিক সেজে বসবো, তাদেরকে অবজ্ঞার চোখে দেখবো এবং তাদের দুর্ভোগে খুশি হবো।

মূল কথা হলো আমি বুঝে গেছি পুলওয়ামা বা কাশ্মীর বড়ো কথা নয়, এগুলো একটা একটা ইস্যুমাত্র, এইসব ইস্যুকে কেন্দ্র করে প্রতিবেশী দেশ বা সম্প্রদায়, এদেরকে তেড়ে সস্তা খিস্তি দিতে হবে, প্রতিটি ইস্যুতে এদেরকে নীচ প্রমান করতে হবে এবং মানুষ খাবেও ব্যাপক, কারণ আগেই বলেছি আমার সাপোর্টার প্রচুর, সাপোর্টার নাহলে কি রেপিস্ট বিধায়কের সমর্থনে মিছিল বের করতে পারি?

ব্যাপারটা আমার কাছে ক্লিয়ার, দেশের যুবসমাজের এত সময় নেই যে তারা বই খুলে ইতিহাস পড়বে, তাই আমরা তাদের জন্য ইতিহাসের নির্যাস তৈরি করি, এবং সেগুলো হোয়াটসএপ, ফেসবুক ইউনিভার্সিটির সিলেবাসে পড়াই। তারা সেই ইতিহাসের রেফারেন্স নিয়েই লড়াই করবে, এতে করে তাদের অনেক সময় ও পরিশ্রম বেঁচে যাবে।
দেশীয় কোন ব্যাপার ঘটনা ঘটলে সংখ্যালঘুদের ব্যাপারে ঘৃণার চাষ করতে হবে এবং প্রতিবেশী দেশের গুষ্টি উদ্ধার করতে হবে। তবেই আমি হয়ে উঠবো দেশের মালিক, বিধাতা, দেশপ্রেমের সার্টিফিকেট প্রদানকারী বিশাল দেশপ্রেমিক।

পরিশেষে একটাই কথা, কাশ্মীরে কাশ্মিরীরা যদি ভালো না থাকে তাহলে সেই দায় রাষ্ট্রের, রাষ্ট্র ব্যর্থ হয়েছে তাদেরকে ভালো রাখতে। এবং সেই ব্যর্থতা ঢাকার জন্য চিত্রনাট্য সাজানো হয়, সেই চিত্রনাট্য অনুসারে প্রতি ইলেকশনের সময় পাকিস্তান হামলা করে, সেনা মরে,জঙ্গি মরে, জঙ্গি ধরা পড়ে, সেই জঙ্গি আবার আঠেরো-বাইশ বছর পর বেকসুর ছাড়া পেয়েও যায়!

একদল ছাগল যতই লাফাক, যতই ধর্ষণের বিচারের কথা বলুক, যতই বলুক চাকরি, কৃষকমৃত্যু, মব লিনচিং, দুর্নীতি, কাটমানি চলতেই থাকবে।

কেউ এদের কথা শুনবে না, কারণ আমি পাল্টা প্রচার করবো টেরিরিস্ট, তিন তালাকের সুফল, নোটবন্দির সুফল, রামমন্দিরের সুফল, মব লিনচিং এর সুফল, গোমূত্রের সুফল, গোক্সিজেন (গরু যে অক্সিজেন ছাড়ে তাহা) এর সুফল, গোরক্ষার সুফল, বন্দে-মাতরমের সুফল, জয় শ্রীরামের সুফল।

আমিই এদেশের মালিক, আমার চেয়ে বড়ো দেশপ্রেমিক আর নেই!