নিবন্ধ: ধর্ম ও জীবন আদর্শ সমাজ গড়তে চাই আদর্শ পরিবার আব্দুল আজীজ মোল্যা আদর্শ পরিবার এর কথা অনেকেই বলেন। আদর্শ মানুষের কথা অনেকেই বলেন। ...
নিবন্ধ: ধর্ম ও জীবন
আদর্শ সমাজ গড়তে চাই আদর্শ পরিবার
আব্দুল আজীজ মোল্যা
আদর্শ পরিবার এর কথা অনেকেই বলেন। আদর্শ মানুষের কথা অনেকেই বলেন। আদর্শ সমাজের কথা অনেকেই বলেন। কিন্তু কোথায় পাবো সেই আদর্শ পরিবার? কোথায় পাব সেই আদর্শ মানুষ? কোথায় পাব সেই আদর্শ সমাজ? আসুন একটু খুঁজে দেখি।
সুন্দর পরিবার না হলে সুন্দর মানুষ তৈরি হয় না। আর সুন্দর সুন্দর মানুষ হলে তবেই একটি সুন্দর সমাজ তৈরি হবে। সুসংহত পরিবার সুসংহত সমাজ গড়ে তুলতে পারে। বর্তমান যুগে পরিবার ব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়েছে। প্রত্যেকেই তার ব্যক্তিগত সত্তা নিয়ে চিন্তিত। পরিবারের ধার ধারে না। অথচ ব্যাক্তি গড়ে ওঠে পরিবারের মধ্যে থেকেই। আদর্শবান পরিবারকে সকলেই মডেল হিসেবে অনুসরণ করে। আজ মডেল পরিবারের বড়ো অভাব। সেজন্য আমাদের উচিত বিভিন্ন নবী রাসূলদের জমানার মডেল পরিবারের যে নকশা ঐশী গ্রন্থসমূহে দেওয়া হয়েছে তার অনুসরণ করা। মডেল পরিবারে পিতার মর্যাদা ছিল। মাতার মর্যাদা ছিল। সন্তান-সন্ততিদের অধিকার ছিল। বয়স্কদের অধিকার ছিল। শিশুদের অধিকার ছিল। নারীর সম্মান, মর্যাদা, অধিকার ছিল। আজ আমরা আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হলেও আমরা সেই মডেল পরিবারের অনুসরণ করতে ব্যর্থ হয়েছি। ফলে অনেক ক্ষেত্রে পরস্পরকে তার ন্যায্য অধিকার দিতে আমরা ভ্রু- কুঞ্চিত করি। এজন্য দরকার অতীতের সেই ফেলে আসা দিনগুলির দিকে একটু ফিরে দেখা আর নিজেদের পরিবারকে গড়ে তোলা। সর্বশেষ পয়গম্বর হযরত মুহাম্মাদ মোস্তফা (সাঃ) এর রেখে যাওয়া আদর্শ পরিবার এর নকশা আমাদের আমাদের অনুপ্রেরণা এবং অনুসরণ যোগ্য একটা আদর্শ পরিবার। সেই পরিবারের খাদ্যের অভাব ছিল কিন্তু "না-শুকরি" ছিলনা। সেই পরিবারে জীবনধারণের সামগ্রী অতি অল্প ছিল, কিন্তু কারো উপরে দোষারোপ ছিলনা, বরং অল্পতুষ্টি তাদের হাসিমুখ দিয়ে মানিয়ে নেওয়া নিত্য দিনের পরিচয় ছিল। সেইসব পরিবারের মধ্যে একে অপরের প্রতি সহানুভূতি-সাহায্য, এগিয়ে দেওয়ার মানসিকতা ছিল। কিন্তু আজ সে মানসিকতা হারিয়ে যাচ্ছে। সেইসব পরিবারে সন্তান-সন্ততিদের ভালো মানুষ হওয়ার শিক্ষা দেওয়া হতো। দুনিয়া ও পরকালের শিক্ষা দেওয়া হতো। পরকালীন জবাবদিহির চেতনা শিক্ষা দেওয়া হত। মানুষের অধিকারের শিক্ষা দেওয়া হত। কিন্তু আজ শুধুমাত্র ইহকালীন বস্তুগত উন্নতির কথা, সব সময় অপরের তুলনায় বেশি সম্পদ লাভের প্রতিযোগিতা, কিভাবে দুনিয়াতে বড় হব তার দৌড় শেখানো হচ্ছে। কিন্তু সন্তান-সন্ততিদের কে শেখানো হচ্ছে না যে, পরকালীন জীবনে কিভাবে আল্লাহর কাছে সম্মানের পাত্র হওয়া যবে। বরং এখন শিক্ষা দেওয়া হয় কিভাবে দুনিয়াতে বেশি বেশি মানুষের কাছে সম্মান পাবে! বেশি বেশি অর্থ উপার্জন করবে! অনেক বেশি প্রতিষ্ঠা পাবে! বেশি বেশি নেতৃত্ব পাবে! কিভাবে সুন্দর বাড়ি বানাবে, কিভাবে ভালো গাড়ি কিনবে, কিভাবে নিজের জীবনটাকে আরো সুন্দর করবে, কিভাবে বিনোদন এর জিনিস আরো বেশি অর্জন করতে পারবে!
তাই আশংকা হয় আমাদের প্রজন্ম কি আগামী দিনে হারিয়ে যাবে? নতুন প্রজন্ম কি আদর্শচ্যুত হবে? আগামী দিনে হারিয়ে যাবে দুনিয়ার আদর্শহীনতার ভিড়ে! আগামী দিনে তারা কি ধর্মকে অর্থহীন অতিরিক্ত বস্তু হিসেবে ভাবতে শুরু করবে! যেভাবে পৃথিবী এগোচ্ছে আমাদের সত্যি ভাবার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। তাই সুসংহত মানুষ গঠনকল্পে, সুসংহত পরিবার গঠনকল্পে, সুসংগত সমাজ গঠনকল্পে, সুসংহত রাজ্য গঠন করতে, সুসংহত দেশ গঠন করতে, সুসংহত মনুষ্য জাতি গঠন করতে আমাদের পুনরায় ভাবনা চিন্তা করা দরকার।
এ সকল ভাবনা নিয়েই আমাদের নতুন ভাবে পথ চলা শুরু করতে হবে। এসকল চিন্তা-ভাবনা নিয়েই নতুনভাবে পড়াশোনা শুরু করতে হবে। এসকল ভাবনা নিয়েই সন্তান-সন্ততিদের কে লালন পালন করতে হবে। এ সকল ভাবনা নিয়েই পরিবারের আয়-রোজগার, উন্নতি-প্রবৃদ্ধি নিয়ে পরিকল্পনা করতে হবে। এ সকল ভাবনা নিয়েই ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি-বাকরি, সব কে ঢেলে সাজাতে হবে। এসকল ভাবনা নিয়েই শিক্ষাঙ্গন, সিলেবাস, পড়াশোনা, সবকে সাজাতে হবে। এ সকল ভাবনা নিয়েই সমাজ বিনির্মাণে এগিয়ে যেতে হবে। এ সকল ভাবনা নিয়েই রাজনীতি-সমাজনীতি গড়ে তুলতে হবে। এ সকল ভাবনা নিয়েই দেশ পরিচালনার নেতৃত্বে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের পুনরায় গড়ে তুলতে হবে। এসকল ভাবনা নিয়েই একটি দেশের, একটি সমাজের, নতুন পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা করতে হবে।তবে সেই দেশ, সেই সমাজ, সেই পরিবার জগতের কাছে আদর্শ দেশ, আদর্শ সমাজ, আদর্শ পরিবার হিসেবে শোষণমুক্ত দেশ, শোষণমুক্ত সমাজ, সুন্দর পরিবার হিসেবে পরিগণিত হবে।
(লেখক হাবড়া সোনাকেনিয়া নবপল্লী বিদ্যাবিথী হাইস্কুলের শিক্ষক)
COMMENTS