নিবন্ধ: এক বছর হয়ে গেল তিহার জেলের চার দেয়ালের মধ্যে নিঃশেষ করে দেওয়া হচ্ছে প্রতিবাদী কন্ঠ উমর খালিদকে রাকিবুল ইসলাম সমাজকর্মী ছাত্রনে...
নিবন্ধ:
এক বছর হয়ে গেল তিহার জেলের চার দেয়ালের মধ্যে নিঃশেষ করে দেওয়া হচ্ছে প্রতিবাদী কন্ঠ উমর খালিদকে
রাকিবুল ইসলাম
সমাজকর্মী ছাত্রনেতা উমর খালিদকে ১৩ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ দিল্লি থেকে গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উষ্কানি মূলক বক্তব্য দেওয়া এবং দিল্লির দাঙ্গায় মদদ দেওয়া। তার বিরুদ্ধে ইউএপিএ ধারার মামলা দেওয়া হয়। আজ এক বছর পার হয়ে গেছে, উমর খালিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোর কোনটাই এখনও দিল্লি পুলিশ প্রমাণ করতে পারেনি। তবুও তাকে আটকে রাখা হয়েছে অন্ধকার কারাগারে। তবে কী কোন প্রতিহিংসার স্বীকার ছাত্রনেতা উমর খালিদ!
কে এই ছাত্রনেতা উমর খালিদ! দিল্লির জহরলাল নেহরু ইউনিভার্সিটিতে(জেএনইউ) ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে যাদের নাম উঠে এসেছে তাদের মধ্যে উমর খালিদ অন্যতম। একদা তিনি ইউনিভার্সিটির ডেমোক্রেটিক স্টুডেন্ট ইউনিয়নের নেতা ছিলেন। ছাত্রদের অধিকার রক্ষা এবং জাতিগত বিদেশ ছড়ানোর বিরুদ্ধে তিনি বারংবার প্রতিবাদ করেছেন। নিম্নবর্ণের ছাত্র রোহিত ভেমুলা আত্ম হত্যার প্রতিবাদে পথে নেমে ছিলেন উমর খালিদ। ঠিক এই সময়ে নিখোঁজ হয় জেএনইউএল আর এক ছাত্র নজিব আহমেদ। নজিব আহমেদকে তার বৃদ্ধ মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আন্দোলন করেছিলেন উমর খালিদ। জেএনইউ-এ উগ্রতা এবং বিদ্বেষ ছড়ানোর জন্য অভিযোগ উঠেছে কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপির ছাত্র সংগঠন আখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের (এবিভিপি) বিরুদ্ধে। ফলে প্রতিবাদী উমর খালিদকে বারবার এবিভিপি হিংসার মুখে পড়তে হয়। এই উমর খালিদ কেন্দ্রের কালা কানুন সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (Citizen Amendment Act) অর্থাৎ সিএএ-এর বিরুদ্ধে সারা দাপিয়ে বেড়ান উমর খালিদ। জনগণকে এই কালা কানুনের বিরুদ্ধে বোঝাতে থাকেন। পাশাপাশি এই আইন বর্জন করার ডাক দেন। চারিদিকে যখন সরকার বিরোধী হাওয়া উঠেছে, ঠিক তখন ঘটে যায় দিল্লির বুকে ভয়ঙ্কর দাঙ্গা। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল প্রকাশ্য বন্দুক নিয়ে দাঙ্গায় মদদ দেওয়া ব্যক্তিদের ছেড়ে পুলিশ গ্রেফতার করতে থাকে সিএএ আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া ব্যক্তিদের। তাদের মধ্যে বেশকিছু জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া ইউনিভার্সিটির ছাত্র-ছাত্রী ছিল। এদের অনেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। কিন্তু জহরলাল নেহরু ইউনিভার্সিটির প্রাক্তন ছাত্র উমর খালিদ এখনো তিহার জেলের চার দেয়ালে মধ্যে আবদ্ধ আছেন।
কোন অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে যদি রাষ্ট্রের চোখে অপরাধী সাব্যস্ত হয় তাহলে একথা নির্দ্বিধায় বলা যায় রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক কাঠামো ধীরে ধীরে ভেঙে পড়তে চলেছে। ওমর খালিদ এর বিরুদ্ধে এমন কোনো জোরালো অভিযোগ নেই যার দ্বারা প্রমাণ করা যায় যে জহরলাল নেহেরুর প্রাক্তন ছাত্র দেশের মধ্যে বিশৃংখল পরিবেশ তৈরি করছেন। বরং বারবার তাকে দেখা গেছে নিপীড়িত জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে উচ্চস্বরে মানুষের অধিকার পাইয়ে দেয়ার কথা। রাষ্ট্রের চোখে এটাই যদি অপরাধ হয়, আর এই অপরাধের কারণে জেলখানা চার দেয়ালের মধ্যে এক প্রতিবাদী কন্ঠকে চেপে দেয়ার চেষ্টা হয় আর দেশের সব মানুষ নীরবে নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকে তাহলে অবশ্যই এ সমাজ থেকে প্রতিবাদী কণ্ঠ ধীরে ধীরে কমতে থাকবে। লেখক সাহিত্যিক থেকে শুরু করে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের অবশ্যই এই প্রতিবাদী কন্ঠ গুলোকে সুবিচার পাইয়ে দেয়ার জন্য পথে নামতে হবে। যদি উমর খালিদরা কারাগারের অন্ধকারে পড়ে থাকে তবে সাধারণ মানুষ ধীরে ধীরে সুবিচার থেকে বঞ্চিত হবে।
COMMENTS