নিবন্ধ: ছবি প্রতীকী মিম্বার-এর ইতিকথা আব্দুল আজীজ মোল্যা "মিম্বার" একটি উঁচু কাঠামো, যার উপর দাঁড়িয়ে জনসমাবেশের উদ্দেশ্যে কোন...
নিবন্ধ:
ছবি প্রতীকী |
মিম্বার-এর ইতিকথা
আব্দুল আজীজ মোল্যা
আরব সমাজে খতীব সাধারণত দন্ডায়মান অবস্থায় জনসমক্ষে বক্তব্য প্রদান করতেন।আরাফা'র ময়দানে খুতবা (বক্তব্য) প্রদানের সময় নবীজী (সাঃ) উটের পিঠে আসীন ছিলেন। মক্কা বিজয়ের দিন তিনি দন্ডায়মান অবস্থায় বক্তব্য দিয়েছিলেন। সাধারণভাবে দাঁড়িয়ে খুতবা দেওয়াটাই তাঁর আদত ছিল।উপস্থিত জনগণ মাটিতে বসে বক্তব্য শুনেছিলেন। মদিনার মসজিদে একটা নির্দিষ্ট স্থান ছিল। খুতবা প্রদানের সময় তিনি খেজুর গাছে ঠেস দিয়ে খুতবা দিতেন।খুতবা প্রদান কালে হাতে একটা লাঠি থাকত। লাঠিতে ভর দিয়ে খুতবা দিতেন। পরবর্তীকালে ইট পাথর দ্বারা মিম্বার নির্মিত হয়।
নবী (সাঃ) যতদিন ছিলেন ততদিন তিনিই খুতবা দিয়েছিলেন। তাঁর পর খলীফা আবুবকর (রাঃ), খলীফা ওমর (রাঃ),খলীফা উসমান (রাঃ),খলীফা আলী (রাঃ) রাষ্ট্র পরিচালনা এবং মসজিদে নামাজ পড়ানো ও খুতবা দেয়ার কাজ সমান্তরাল ভাবে আদায় করতেন। মুসলিম শাসকগণ যখন খতীবের দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হয় তখন থেকে "মিম্বার" মসজিদের ইমাম বা ধর্মীয় বক্তার বক্তৃতা মঞ্চে রূপ লাভ করে। আজ ও ইমাম বা ধর্মীয় বক্তা ছাড়া অন্য কাউকে মিম্বারে খুতবা দিতে দেয়া হয় না। মসজিদে জুমআর সালাতের (নামায) ব্যবস্থা ছিল। মিম্বার মূলত সে জন্য ব্যবহৃত হয়। জুম্মার সালাতে রাসুল (সাঃ) দুটি খুতবা দিয়েছিলেন। আজও সারা পৃথিবীতে জুমআর দুটি খুতবা প্রচলিত আছে।
রাসূল (সাঃ)এর সময় মিম্বারের বিশেষ গুরুত্ব ছিল। মিম্বারের প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা হতো। মসজিদের পবিত্রতা মিম্বার ও মেহরাবের চতুর্দিকে কেন্দ্রীভূত ছিল। মুসলিম সমাজে মিম্বার অতি উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন। কোন জনপদ কেবল তখনই নগরের মর্যাদা লাভ করতে পারত যখন তার মধ্যে একটি মিম্বার থাকত এবং জুম্মার সালাত আদায় করার অধিকার থাকত ।
সুতরাং মিম্বারকে যথেচ্ছ ব্যবহার করা যাবে না। অযোগ্য লোককে মিম্বারে পাঠানো থেকে বিরত থাকতে হবে। খতীব বা ইমাম উপযুক্ত না হলে তাকে নিয়োগ দেওয়া উচিত হবেনা। যারা নবীজী (সাঃ) এর প্রকৃত শিক্ষা ও সংস্কৃতির প্রচারক তারাই মিম্বারের হকদার। আর যারা "গাছের ও খাবো তলার ও কুড়োব" টাইপের লোক তাদের মধ্যে অনৈতিকতার সংমিশ্রণ ঘটে যাবে। আমাদের সমাজ নানা দল- উপদলে বিভক্ত এটি তার অন্যতম কারণ।
আদর্শ সমাজ বিনির্মাণে তাই এগিয়ে আসতে হবে সবাইকে। মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিন আজ স্বাধীন নয়। তারা প্রভাবশালী লোকেদের দ্বারা বা অর্থশালী লোকেদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। আর্থিক কারণে ইমামগণ সত্যি কথাটা সত্যি করে বলতে ভয় পান। যার ফলে ঐতিহ্যময় মিম্বার অমর্যাদার স্বীকার হচ্ছে।
মিম্বার তার স্বকীয়তা ফিরে পাবে সেইদিন যেদিন খতীবগণ হবেন আত্মপ্রত্যয়ী, বলিষ্ঠ, সত্যাশ্রয়ী ও নবীপ্রেমিক। যে মিম্বার থেকে খুতবা দেয়ার ফলে মিল্লাত ও দেশ ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। সেই মিম্বারকে আবার স্বমহিমায় ফিরে পেতে চাই !
(লেখক হাবড়ার সোনাকেনিয়া নবপল্লী বিদ্যা বীথি হাইস্কুলের শিক্ষক)
COMMENTS