News Briefs: এই রাজ্য (বাম দিক থেকে) মশিউর রহমান, মাওলানা তাহেরুল হক, মাওলানা আব্দুর রফিক, রহমত আলী খান, ডা. মশিহুর রহমান, সাদাব মাসুম জামা...
News Briefs: এই রাজ্য
![]() |
(বাম দিক থেকে) মশিউর রহমান, মাওলানা তাহেরুল হক, মাওলানা আব্দুর রফিক, রহমত আলী খান, ডা. মশিহুর রহমান, সাদাব মাসুম |
জামাআতে ইসলামী হিন্দের পশ্চিমবঙ্গ শাখার পক্ষ থেকে কলকাতার প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে এই আহ্বান জানানো হয়েছে। সাংবাদিক সম্মেলনে জামাআতের রাজ্য সভাপতি মাওলানা আব্দুর রফিক সাহেব বলেন, আমাদের দেশে পারিবারিক সংকটের নানা চিত্র ভেসে উঠছে। গার্হস্থ্য হিংসা সেই সংকটকে তীব্র করেছে। স্ত্রীর প্রতি অত্যাচার, সন্তানের প্রতি মানসিক নিপীড়ন, কন্যাভ্রুণ হত্যা, পণপ্রথা জনিত কারণে বধূ হত্যার ঘটনা সারা দেশে দিনদিন বেড়েই চলছে। স্বামী নিগ্রহও পারিবারিক সংকট সৃষ্টিতে বিশেষ মাত্রা দিয়েছে। মাওলানা আব্দুর রফিক সাহেব আরো বলেন,
পারিবারিক সংকটের মধ্যে পরকীয়া প্রেম, অন্যায্যভাবে বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা অহরহ ঘটছে। ফলে পারিবারিক জীবন যেখানে সুখের নীড় হওয়ার কথা, মানসিক শান্তির আধার হয়ে ওঠার ক্ষেত্র- সেই লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয়ে যাচ্ছে। মাওলানা রফিক সাহেব এক পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, ২০২০ সালের মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জাতীয় মহিলা কমিশন ১৩ হাজার গার্হস্থ্য হিংসার কেস নথিভুক্ত করেছে। এই লকডাউনের যত গার্হস্থ্য হিংসার ঘটনা ঘটেছে বিগত ১০ বছরে ততটা হয়নি, অথচ আক্রান্তদের মধ্যে মাত্র ৭ শতাংশ মানুষই অভিযোগ দায়ের করেছে। লজ্জা ও সম্মানের ভয়ে সব রিপোর্ট জনসমক্ষে আসে না। সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি আরো উল্লেখ করেন, পরিবার সভ্যতা ও সংস্কৃতির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। ভালো পরিবার থেকে ভালো মানুষের আশা করা যায়। পরিবার নিজ পরিসরে যেমন মূল্যবোধের লালন করবে, তেমন পরিবার থেকে ভদ্র, মার্জিত এবং শিক্ষা-দীক্ষায় উন্নত মানুষ হয়ে ওঠা সম্ভবপর হবে। গার্হস্থ্য হিংসা যেখানে থাকবে সেখানে সন্তানদের ভালোভাবে বেড়ে ওঠার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে উঠবে। আমাদের দেশে ডমেস্টিক ভায়োলেন্স অ্যাক্ট রয়েছে, কিন্তু নারীর প্রতি অত্যাচার, শিশুদের মানসিক নিপীড়ন, বয়স্কদের প্রতি অবজ্ঞা-অবহেলা এবং তাদের প্রতি মানসিক অত্যাচার কমছে না, বৃদ্ধাশ্রম তারই পরিণাম। আইন আছে, তথাপি অপরাধ কমছে না কেন? মাওলানা আব্দুর রফিক সাহেব জানান, ভোগবাদ ও বস্তুবাদী চিন্তাধারা এবং নীতি নৈতিকতা মূল্যহীন হয়ে যাওয়া এই সব অপরাধের জন্য অনেকাংশে দায়ী। পরিবারে নৈতিক চরিত্রের শিক্ষার অভাব এবং মানবজাতির এক ও একক স্রষ্টার দেওয়া বিধানের যথাযথ অনুসরণ না করার ফলেই পারিবারিক সংঙ্কট এবং সামাজিক অবক্ষয় দেখা দিয়েছে। তিনি গার্হস্থ্য হিংসা রোধের জন্য আহ্বান জানিয়ে বলেন, সৎ, চরিত্রবান মানুষ তৈরির জন্য শিশুদের প্রথম জীবন থেকে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। সুখী ও শান্তিপূর্ণ দাম্পত্য জীবন প্রতিষ্ঠায় স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ঐশী ভাবধারায় সুমধুর সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। পরিবারের বয়স্কদের প্রতি সম্মান ও ছোটদের স্নেহের পরশ দিয়ে জীবনকে গড়ে তুলতে হবে। সন্তানদের সুনাগরিক করে গড়ে তোলাই হবে পরিবারের লক্ষ্য। শুধু ডিগ্রী অর্জন নয়, তাদেরকে মানবতাবাদী, সৎ, রুচিশীল এবং ভদ্র মানুষ করে তুলতে হবে। বস্তুবাদী শিক্ষায় যার একান্ত অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। এইদিনে সাংবাদিক সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন সাবেক রাজ্য সভাপতি রহমত আলী খান সাহেব, রাজ্য সাধারন সম্পাদক মসিউর রহমান, রাজ্য সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য মাওলানা তাহেরুল হক সাহেব, ডা: মশিহুর রহমান সাহেব, শাদাব মাসুম সাহেব প্রমুখ।
উল্লেখ্য জামাআতে ইসলামী হিন্দ, পশ্চিমবঙ্গ ১০ থেকে ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ রাজ্যব্যাপী “সুসংহত পরিবার-সুসংহত সমাজ” শিরোনামে প্রচারাভিযান পরিচালনা করতে চলেছে। এই অভিযানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হল:
১। প্রত্যেক বাড়িতে শান্তি বজায় রাখতে এবং সমাজকে শক্তিশালী করতে লোকদের সচেতন করা হবে। এ বিষয়ে সব সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় গোষ্ঠীর মানুষের মধ্যে সাধারণ নীতিমালাকে প্রচার করা হবে।
২। বিবাহ বহির্ভূত জীবনের বিপদকে তুলে ধরা হবে। মানুষের মধ্যে সম্পর্ক হবে নৈতিকতা ভিত্তিক।
৩। পরিবারের সকলের মধ্যে কি কি কর্তব্য আছে তার শিক্ষা দেওয়া হবে। শান্তি ও সুবিচার প্রতিষ্ঠায় জোর দেওয়া হবে। পরিবারে ন্যায়, সুবিচার প্রতিষ্ঠা, বয়স্ক-দুর্বলদের প্রতি সম্মান এবং সন্তানদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করার প্রচার করা হবে। প্রত্যেকের অধিকার আদায় ও কর্তব্য পালনে সচেতন করা হবে। ভালো পরিবেশ তৈরি করতে শিক্ষা দেওয়া হবে যাতে ভবিষ্যত প্রজন্ম তাদের অধিকার অর্জন করতে পারে।
৪। মানুষের মধ্যে স্রষ্টার বাণী সম্বলিত কিতাব কোরআন ও হযরত মুহাম্মাদ (সা:)-এর হাদীসের শিক্ষাকে উপস্থাপন করা হবে। ইসলামী নীতি-নৈতিকতার ভিত্তিতে ব্যক্তিত্বের বিকাশে মুসলমানদের উৎসাহিত করা হবে। মুসলিম উন্মাহর সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে সুন্দর ও সুখী পরিবার গড়ে তুলতে মুসলমানদের উদ্বুদ্ধ করা হবে।
৫। পরিবার সংক্রান্ত সাধারণ মূল্যবোধ ও সংস্কৃতি নিয়ে আলোচনা করা হবে। পরিবারগুলিকে শক্তিশালী এবং সমাজকে সুরক্ষা দিতে আমাদের এই মহৎ উদ্যোগে সঙ্গ দিতে আপনাদের স্বাগত জানাই।
এই প্রচার অভিযানকে সফল করার জন্য জামায়াত তাদের কর্মী সমর্থকদের দেশের মানুষের কাছে বিভিন্ন পুস্তক এবং সচেতনতা মূলক লিফলেট পৌঁছে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া তারা নাটিকা, শর্ট ফিল্ম এবং সঙ্গীতের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
COMMENTS