News Brief: এই রাজ্য Waqf Amendment Bill ওয়াকফ সম্পত্তির মালিক আল্লাহ, মুসলমানরা এই সম্পত্তির আমানতদার ও খিদমতগার মাত্র: সাইয়েদ সা'দা...
News Brief: এই রাজ্য
Waqf Amendment Bill
ওয়াকফ সম্পত্তির মালিক আল্লাহ, মুসলমানরা এই সম্পত্তির আমানতদার ও খিদমতগার মাত্র: সাইয়েদ সা'দাতুল্লাহ হুসাইনী
ওয়াকফ সংশোধনী বিল -২০২৪ বয়কটের বিরুদ্ধে কলকাতার রাজপথে জন বিস্ফোরণ। হাজার হাজার জনতা ওয়াকফ সংশোধনী বিল ২০২৪-এর প্রতিবাদে কলকাতা জামায়াতের হয়। এই জমায়েতে উপস্থিত ছিলেন জামাআতে ইসলামী হিন্দের সর্বভারতীয় সভাপতি সাইয়দ সাদাতুল্লাহ হোসায়েনী।
প্রত্যয় অনলাইন ডেস্ক:
ওয়াকফ সংশোধনী বিল-২০২৪ বাতিলের দাবিতে জামাআতে ইসলামী হিন্দের আহ্বানে শনিবার ৯ নভেম্বর কলকাতা নিউমার্কেট ও পুরসভা সংলগ্ন এলাকায় এক বিশাল সমাবেশ হয়ে গেল। এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে সমগ্র ধর্মতলা চত্বর কার্যত জনসমুদ্রে পরিণত হয়। বিশেষ করে মহিলাদের উপস্থিতি ছিল নজরকাড়া। বক্তব্য রাখেন জামাআতে ইসলামীর সর্বভারতীয় সভাপতি সাইয়েদ সা'দাতুল্লাহ হুসাইনী, কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মালিক মুহতাসিম খান, কেন্দ্রীয় সম্পাদক মাওলানা আব্দুর রফিক, রাজ্য সভাপতি ডা. মসিহুর রহমান, রাজ্য সম্পাদক শাদাব মাসুম, আব্দুল আজীজ, মুসলিম পার্সোনাল ল' বোর্ডের সদস্য মাওলানা আবু তালেব রহমানি, জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের কোলকাতার সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আশরাফ আলি কাশেমি, জমিয়তে আহলে হাদীসের মাওলানা মারুফ সাহেব, সারা বাংলা সংখ্যালঘু ফেডারেশনের মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, মহম্মদ আসলাম, বন্দি মুক্তি কমিটির ছোটন দাস, জমিয়তে উলামায়ে বাংলার সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন প্রমুখ। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জামাআতে ইসলামীর প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি মুহাম্মদ নূরুদ্দিন শাহ, রাজ্য সম্পাদক মাওলানা তাহেরুল হক সাহেব ।
আমীরে জামাআত সাইয়েদ সা'দাতুল্লাহ হোসায়েনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, আজকের এই সমাবেশ কলকাতা থেকে দিল্লিকে ওয়াকফ সংশোধনী বিল বাতিলের বার্তা দিল। ওয়াকফ এক দ্বীনি ও মাযহাবী মসলা। ওয়াকফ সম্পত্তির মালিক আল্লাহ। মুসলমানরা এই সম্পত্তির আমানতদার ও খিদমতগার মাত্র। এই বিল দেশ বিরোধী, সংবিধান বিরোধী, গণতন্ত্র বিরোধী, ধর্মনিরপেক্ষতার বিরোধী। সংবিধানের আর্টিকেল ২৬ সংখ্যালঘুদের সবরকম অধিকার দিয়েছে। তারপর সরকার এই কাজ করতে পারে না। জেলাশাসককে ওয়াকফ সম্পত্তির মূল তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব এবং দু'জন অমুসলিমকে ওয়াকফ বোর্ডের সদস্য করার কথা বলা হয়েছে এই বিলে। অথচ সংবিধান অনুযায়ী এটা হতে পারে না। কারণ, অমুসলিমরা কখনো ওয়াকফ সংক্রান্ত বিধি, বিধান, আইন, ওয়াকফের ইতিহাস ও শরীয়তি দৃষ্টিকোণ ইত্যাদি জানতে পারে না। এরা কখনো ওয়াকফ বিশেষজ্ঞ হতে পারে না। তাই ওয়াকফ সম্পর্কে পড়াশোনা করে বিস্তারিত জানতে এবং মুসলিম, অমুসলিম নির্বিশেষে পরিচিতজনদের কাছে সঠিক তথ্য পৌঁছে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। কারণ বিজেপি, আরএসএস, তাদের আইটি সেল এবং কেন্দ্র সরকার ওয়াকফ বিষয়ে দেশবাসীকে যেভাবে ভুলভাল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করছে, ন্যারেটিভ তৈরি করছে, প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে – তা থেকে মানুষকে সচেতন করার কথা বলেন আমীরে জামাআত। পাশাপাশি তিনি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশ্যে বলেন, আমরা তাদের গতিবিধির ওপর নজর রাখছি, বিশেষ করে ওয়াকফ বিষয়ে তাদের অবস্থান লক্ষ্য রাখছি যাতে তারা এ ব্যাপারে অজুহাত দিতে না পারে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, মহিলা সংরক্ষণ বিলকে এই বিরোধীরাই আটকে দিয়েছিল। সেভাবেই তারা যেন ওয়াকফ বিলকে আটকাতে সচেষ্ট হয় – এই দাবি জানান তিনি।
সহ-সভাপতি মালিক মুহতাসিম খান এদিনের সমাবেশকে ঐতিহাসিক আখ্যা দিয়ে বলেন, মাত্র কদিন আগে পার্লামেন্টে গিয়ে জেপিসি-র সঙ্গে বৈঠক করে মৌখিক এবং লিখিত উভয় পদ্ধতিতেই ওয়াকফ বিলের তীব্র বিরোধিতা ও আপত্তি জানিয়ে এসেছি জামাআতে ইসলামীর প্রতিনিধিদল। তিনি বলেন, ওয়াকফ সম্পত্তি মুসলিমদের।
তারা নিঃশর্তে দেশ ও দশের কল্যাণে আল্লাহর নামে এই বিপুল সম্পত্তি উৎসর্গ করে গিয়েছেন। অন্য কোন হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, খ্রিস্টান ইত্যাদি অন্যদের ধর্মীয় সম্পত্তি পরিচালনায় কেন্দ্র সরকার হস্তক্ষেপ করছে না। শুধুমাত্র মুসলিমদের ওয়াকফ সম্পত্তির অধিকার ছিনিয়ে নিতে প্রয়াসী হয়েছে। তিনি এও বলেন, ওয়াকফ সম্পত্তিতে গড়ে ওঠা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য পরিষেবা কেন্দ্র ইত্যাদি থেকে বহু সংখ্যক অমুসলিমরাও উপকৃত হন। ওয়াকফ বোর্ডে দুর্নীতি হলে কঠোর ব্যবস্থা নিক সরকার। তাতে আপত্তি নেই। কিন্তু দুর্নীতিকে অজুহাত করে ওয়াকফ সম্পত্তি ছিনিয়ে নেওয়ার এই নোংরা ষড়যন্ত্র মেনে নেওয়া হবে না। শুধুমাত্র ওয়াকফের ক্ষেত্রে বাই ইউজার বিধানকে খতম করার কথা বলা হয়েছে এই বিলে। অন্য কোনও ধর্মীয় সম্পত্তির ক্ষেত্রে এটা করা হয়নি। অন্য সব ধর্মের ক্ষেত্র বাই ইউজার বিধান বলবৎ রয়েছে। তূণমূল কংগ্রেস সহ দেশের সব বিরোধী দলগুলোকে মোদি সরকারের আনা ওয়াকফ সংশোধনী বিলকে রুখতে সর্বাত্মক প্রয়াস চালানোর আহ্বান জানান তিনি।
জামাআতে ইসলামীর প্রাক্তন আমীরে হালকা তথা কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি মাওলানা আব্দুর রফিক বলেন, ওয়াকফ আইনে সংশোধন আনতে হলে মুসলিম সমাজের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে মুসলিম সম্প্রদায়কে সহমতে এনে তবেই করতে হবে। সাংবিধানিক কাঠামোকে মান্যতা দিয়ে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আইন সংশোধন করা যেতে পারে। এর বাইরে গিয়ে অন্য কোনও পন্থায় ওয়াকফ সংশোধনী আইন করা যাবে না। আমরা এই অশুভ প্রয়াস বরদাশত করব না। তাহলে আমরা সাংবিধান অধিকার ও রক্ষাকবচ ধরে রাখতে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে দেশজুড়ে আন্দোলনে নামার হুমকি দেন তিনি। এই বিলকে বিতর্কিত, স্পর্শকাতর ও বিপজ্জনক বলে মন্তব্য করেন আব্দুর রফিক সাহেব। তাঁর মতে, মুসলিমদের উন্নয়নের লক্ষ্যে আরও অনেক আর্থ-সামাজিক কর্মসূচি বা প্রকল্প কেন্দ্র সরকার নিতে পারে। আমরা তাকে সর্বান্তঃকরণে সমর্থন দেব। কিন্তু ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সাংবিধানিক অধিকারে সরকার যেন কোনভাবেই হস্তক্ষেপ না করে। তাহলে আমরা চুপ করে বসে থাকব না।
আমীরে হালকা ডা. মসিহুর রহমান তাঁর বক্তব্যে বলেন, কলকাতার রাজপথে আজ হাজার হাজার নারী-পুরুষের জমায়েত স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ওয়াকফ একটা ইবাদত। নিজ নিজ বিশ্বাস অনুযায়ী ধর্মের অনুশীলন, প্রচার এবং প্রতিষ্ঠান গড়া ও পরিচালনার অধিকার দিয়েছে সংবিধান। তা কেড়ে নেবার ষড়যন্ত্র চলছে গত এক দশক ধরে। ওয়াকফ বিলও সেই ষড়যন্ত্রের অন্যতম অংশ। তাই এই বিল সংবিধানের লংঘন। এটা কেন্দ্রের নাপাক অভিসন্ধি। নবী (সা.) এর সময় থেকেই ওয়াকফের সিলসিলা জারি আছে। কুরআন হাদীসেও ওয়াকফ বিষয়ক আলোচনা রয়েছে। সর্বসেষ ১৯৯৫ সালের ওয়াকফ আইন ঠিকঠাকই ছিল। বর্তমান কেন্দ্র সরকার সেখানে নাক গলাতে সচেষ্ট হয়েছে। মসজিদ, মাদ্রাসা, খানকাহ, ঈদগাহ, কবরস্থান সবকিছু কুক্ষিগত করতেই এই বিল আনা হয়েছে। সব রাজ্যের ওয়াকফ বোর্ডকে পঙ্গু করে দিয়ে ডিএম-এর হাতে ওয়াকফের সর্বোচ্চ ক্ষমতা তুলে দেওয়ার চক্রান্ত করা হচ্ছে। সংখ্যালঘুদের সাংবিধানিক অধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার এই নীলনকশা আমরা কোনভাবেই মেনে নেব না বলে হুমকি দেন তিনি। তাঁর কথায়, ওয়াকফ সম্পত্তি মুসলিমদের ধর্মীয় স্থাপনাই গড়ে ওঠেনি; ওয়াকফ সম্পত্তিতে বহু জনকল্যাণকর ও মানবসেবামূলক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যেখান থেকে উপকার পাওয়া অমুসলিমের সংখ্যা নেহাৎ কম নয়। সবশেষে ৮ ডিসেম্বর মুর্শিদাবাদে আরও বৃহৎ সমাবেশের আগাম ঘোষণা দেন তিনি।
COMMENTS