সম্পাদকীয়: Eid-Ul-Fitr ঈদ শুধুমাত্র একটা উৎসব নয়, এটা একটা ইবাদাত উৎসব এবং ইবাদাতের উজ্জ্বল মেলবন্ধন দেখিয়েছে ইসলাম। শুধুমাত্র উৎসবের...
সম্পাদকীয়:
Eid-Ul-Fitr
ঈদ শুধুমাত্র একটা উৎসব নয়, এটা একটা ইবাদাত
উৎসব এবং ইবাদাতের উজ্জ্বল মেলবন্ধন দেখিয়েছে ইসলাম। শুধুমাত্র উৎসবের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি ঈদ। এটা একটা ইবাদাত সকল মুসলিমের জন্য। এই ইবাদাতের সুবাস ছড়িয়ে পড়ুক বিশ্ব মুসলিমের জীবন।
পবিত্র রমজানের এক মাস উপবাসব্রত পালনের পর আসে ঈদ-উল-ফিত্র। সকল ধর্মপ্রান মুসলিম সাড়ম্বরে এই খুশির উৎসব ঈদ পালন করেন। এই খুশিতে মেতে ওঠে একেবারে সমাজের সকল স্তরের মানুষ। সমাজের উচ্চবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত সকলেই এই খুশির উৎসবে যাতে শামিল হতে পারে সেজন্যে মানবতার বন্ধু আল্লাহ তায়ালার প্রেরিত শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এই উৎসব পালনের কিছু রীতি নীতি দেখিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় সেই সাড়ে চোদ্দশো বছর আগের উৎসবের আবেগ, উৎসাহ ও উদ্দীপনার কিছুটা রং বদল ঘটে গেছে। একটা ইবাদাত ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয়ে গেছে, আচার সর্বস্ব একটা উৎসবে। আজকের এ ঈদ যেন শুধুমাত্র সমাজের উচ্চবিত্ত মানুষগুলোর উৎসবে পরিণত হয়েছে। ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে, ইবাদতের মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
বাংলার মুসলমানরা প্রতিবছর শারদীয় দুর্গাপূজার বিভিন্ন থিম পুজোর সঙ্গে বেশ কয়েক দশক ধরে পরিচিতি লাভ করেছে। ধর্মীয় ভাব গাম্ভীর্য থেকে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে উৎসব। সেখানে বেশিরভাগই সমাজের উচ্চবিত্ত শ্রেণীর মানুষের আনন্দপূর্ণ জীবন চিত্র বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে নজর কাড়ে। বড় বড় পুজো প্যান্ডেলের আড়ালে থেকে যায় সমাজের প্রান্তিক শ্রেণীর মানুষের জীবন চিত্র। বর্তমান সময়ের একদল মুসলিম যুবক ধর্মের ভাব-গাম্ভীর্য উপেক্ষা করে নেমে পড়েছে অনেকটা থিম পুজোর স্টাইলে উৎসব সর্বস্ব ঈদ পালনে। এখানেও ধীরে ধীরে আলোকসজ্জা আর বিভিন্ন ধরনের আরম্বরপূর্ণ খরচে আড়ালে হারিয়ে যাচ্ছে সমাজের অসহায় নিম্নবৃত্ত মানুষের ঈদ পালনের ছবি।
বিশ্ব মানবতার মুক্তি দূত পয়গম্বর মুহাম্মদ (সঃ) বলেছেন ঈদ তো তাদের যারা সারাটা মাস মহান আল্লাহর নির্দেশে ইসলামের বিধান মেনে রোজা অর্থাৎ উপবাস ব্রত পালন করলো। ঈদের নামাজ মাত্র দু'রাকাত। আর এই নামাজ ওয়াজিব। যেখানে দিনে পাঁচবার নামাজ পড়া ফরজ অর্থাৎ আবশ্যিক। কিন্তু দুর্ভাগ্যের এই ঈদের আবেগ লক্ষ্য করা যায় সেই সমস্ত নামধারী মুসলিমদের মধ্যে যারা দিনে আল্লাহর নির্দেশে নামাজ আদায় করেনি এবং দীর্ঘ এক মাস রোজা পালন করেনি। এমনকি যাকাত এবং ঈদের নামাজের পূর্বে ফিতরা আদায়ের যে বিধান ইসলামে আছে সে ব্যাপারেও তারা ভয়ংকর ভাবে উদাসীন। আজকের যুবসমাজের একটা বড়ো অংশ ঈদেরকে শুধুমাত্র একটা উৎসবে পরিণত করেছে। তারা নিজেরা ভুলে গেছে এটা একটা ইবাদাত এবং সমাজকেও ভুলিয়ে দিতে চেষ্টা করছে। সেজন্য তারা প্রচুর অর্থ চাঁদা তুলে ঈদগাঁ, মসজিদ এবং রাস্তার উপর বড় বড় তোরণ বা গেট বানাতে যতটা উদ্যোগ নেয় সমাজ পরিবর্তনের জন্য এবং একটা সুন্দর দায়িত্বপূর্ণ জাতি গঠনে তাদের কোন অবদান লক্ষ্য করা যায় না।
আল্লাহর প্রিয় রাসূল হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-এর ঈদ পেরেছিল অসহায়ের চোখের পানি মুছে দিতে। আমাদের ঈদ পারে না কারো কান্না দূর করতে! আমাদের ঈদ খোঁজ নেয় না সমাজে অর্থের অভাবে বিনা চিকিৎসায় কোন মানুষ কেঁদে ফিরছে কিনা! আমাদের ঈদ সেইসব অসহায় ইয়াতিম এবং পথ শিশুদের কথা ভাবতে শেখায় না! আমাদের ঈদ পারে না মেলাতে সমাজের প্রান্তিক মানুষের সঙ্গে প্রভাবশালী ধনাঢ্য ব্যাক্তিদের!
মাত্র বছরের দুটি ঈদ, মুসলিমদের ধর্মীয় উৎসব। এই উৎসবের প্রাণ লুকিয়ে আছে সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষের অংশগ্রহণের মধ্যে দিয়ে। ইসলামের প্রতিটি শিক্ষা মানবিক জীবন যাপনের প্রতি উৎসাহিত করে। এমনকি সেটা একটা উৎসবও হতে পারে। এই শিক্ষায় যদি আমরা পরবর্তী প্রজন্মকে গড়তে না পারি তাহলে এই জাতি ভয়ংকর ব্যর্থতার মুখোমুখি হবে। ইসলামের শিক্ষা উপেক্ষা করে মুসলিম যুবশক্তি তারা যদি নিজের মন মত উৎসবের প্রচেষ্টা করে তবে হারিয়ে যাবে ঈদের প্রকৃত শিক্ষা। শুধু উৎসব থেকে যাবে হারিয়ে যাবে ঈদের প্রাণ 'ইবাদাত'।
COMMENTS